‘পদ নাই, পদোন্নতি নাই’ নীতি থেকে বের হয়ে আসার দাবি চিকিৎসকদের
০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২১ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২১ এএম
ক্যাডার বৈষম্যের কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে কর্মকর্তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারগুলোতে, এমনকি স্বাস্থ্য ক্যাডারের বেশ কিছু স্পেশালিটিতে পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি নিশ্চিত করা হলেও অনেক বিভাগে বছরের পর বছর একই পদে আটকে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘পদ নাই, পদোন্নতি নাই’ নীতি বাতিলের দাবি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তাঁরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারগুলোতে এমনকি স্বাস্থ্য ক্যাডারের বেশকিছু স্পেশালিটিতে পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি নিশ্চিত করা হলেও গাইনিসহ অনেক বিভাগে বছরের পর বছর একই পদে আটকে আছেন তারা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘পদ নাই, পদোন্নতি নাই’ নীতি থেকে বের হয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দেশের চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং অন্তঃ ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্রুত পদোন্নতির দাবি জানান। এতে সরকারের অতিরিক্ত আর্থিক খরচ হবে না বলেও জানান চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের আহ্বায়ক ডা. মির্জা মো. শামসুল আরেফিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত। অন্য ক্যাডারে থাকা আমাদের জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তরাও পদে আমাদের সিনিয়র। এটা আমাদের জন্য একটা মানসিক পীড়ার কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দীর্ঘদিন মেডিকেল অফিসার পদে আটকে থাকা চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবি জানাচ্ছি। এতে সরকারের আর্থিক কোনো চাপ পরবে না। কারণ আমরা ইতিমধ্যে ওই বেতন পাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত এই দাবি জানিয়ে আসছি। তবে আশ্বাস ছাড়া কোনো কিছুই পাইনি। জনগণের ভোগান্তি হয় এমন কোনো কর্মসূচিতে আমরা যাবো না। আমরা মানুষকে জিম্মি করে দাবি-দাওয়া আদায় করবো না।
মেধার অপচয়ের কথা উল্লেখ করে ডা. শামসুল আরেফিন বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতারা ইচ্ছে হয়েছে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেছে। এসব শিক্ষার্থীদের কে পড়াবে সে চিন্তা কেউ করেনি। আমাদের কোয়ালিটি চিকিৎসক প্রয়োজন। সঠিক স্থানে সঠিক লোক নিয়োগ প্রয়োজন। একজন কার্ডিওলজি সার্জনকে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে প্যারাসিটামল লেখার জন্য বসিয়ে রেখেছে। এটা মেধার অপচয়। মেধার মূল্যায়ন না হলে মেধাবিরা দেশত্যাগ করে। তখন আমাদের কতজনের সামর্থ্য রয়েছে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করার। আমরা দেশের মানুষকে সেবা দিতে চাই। আমরা চাইনা বাংলাদেশের রোগীরা অন্য দেশ মেডিকেল টুরিজমের হাতিয়ার হোক।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি দাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের দেখা করে আমাদের সুপারিশ জানিয়েছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) প্রফেসর ডা. সায়েদুর রহমান স্যারের সাথে কথা বলেছি। তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. বশির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আর্থিক সুবিধা চাচ্ছি না। আমরা শুধু আমাদের সম্মান চাচ্ছি। যারা রাষ্ট্র কাঠামো ঠিক করে তারা এই সমস্যাটা তৈরি করেছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরতরা যদি চিকিৎসক হতেন তাহলে হয়তো তারা আমাদের ওয়োন করতেন। তারা আমাদের দুঃখ বুঝতে পারতেন। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রশাসন ক্যাডারের যারা আছেন, তারা এদেশে চিকিৎসা নেন না। তাদের সন্তানরাও এদেশে থাকেন না।
বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এমবিবিএস ডিগ্রির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হুমকিত মুখে। এর কারণ চিকিৎসক সংকট। আর এ সংকটের কারণ চিকিৎসকদের সময় মতো পদোন্নতি না হওয়া। নিয়ম অনুযায়ী মেডিকেল কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী রেসিও হবে ৩০:১। কিন্তু আমাদের তা হচ্ছে না। কারণ পদ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের পদোন্নতি হচ্ছে না। এ সময় বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের পক্ষ থেকে এ সমস্যা সমাধানে চার দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- ১. যেহেতু পদোন্নতি প্রার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে শুধুমাত্র পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে বর্তমান সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে জনগণের চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে নানা বিষয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক নতুন পদ সৃষ্টি করা। ২. সম্ভাব্য নতুন পদের জন্য বর্তমানে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যায় ভূতাপেক্ষভাবে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি/সুপারনিউমারারি/ইন সিটু পদোন্নতি দিয়ে বিদ্যমান জট কমিয়ে জনগণের স্বাস্থ্য সেবার পথ সুগম করা। ৩. সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সকল বিষয়ে দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে সকল বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে ভূতাপেক্ষভাবে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ও প্রয়োজনে ইন সিটু পদোন্নতি। ৪. যেহেতু প্রতিবছর অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অবসরে যান এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়, সেহেতু প্রতি বছর অন্তঃত দুইবার পদোন্নতির নিয়ম চালু করা এবং আন্তঃ ও অন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য কমিয়ে আনতে একটি যুগোপযোগী পদোন্নতি নীতিমালা প্রনয়ন করা। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ আল আমিন, কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ সাফায়াত কামাল, ডা. মুশতাব শীরা মৌসুমী প্রমুখ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চিলমারীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মতবিনিময়
পাকিস্তানে বাসা থেকে উদ্ধার জার্মান কূটনীতিবিদের রক্তাক্ত দেহ
কালিয়াকৈরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নাফিজ সারাফতের পরিবারসহ ১৮ ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ
গোয়ালন্দে প্রতিবন্ধীদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরন
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন জি এম কাদের
আট বিভাগে একযোগে শুরু হবে জুলাই বিপ্লবের সিনেমা নির্মান
আট বিভাগে একযোগে শুরু হবে জুলাই বিপ্লবের সিনেমা নির্মাণ
সিংগাইরে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাব্বির হত্যা মামলায় জাকির খানসহ সকল আসামি খালাস
সরকারি গাছ চুরির অভিযোগে সদরপুরের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাব্বির হত্যা মামলায় জাকির খানসহ সকল আসামি খালাস
ধামরাইয়ে ছাত্র হত্যা মামলায় ইউনিয়ন আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
কিশোরগঞ্জে ইট উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তি সম্প্রসারণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
কোনো বন্ধুরাষ্ট্র জনগণের হত্যাকারীকে আশ্রয় দিতে পারে না : দুদু
রিয়েলমি সি৭৫ এর কার্যক্ষমতা দেখার সুযোগ পেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
রাবি কর্মকর্তা দাবি, বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বাতিল করা হয়েছে আমাদের ন্যায্য সুবিধা
ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধান বিচারপতি
মোরেলগঞ্জে কৃষি অফিসে দুদকের অভিযান
কাজী জাহিদ ইকবাল খিলখিলের ইন্তেকাল